ওমানে ভিসা স্থগিত: প্রবাসী আয়ে ধাক্কার শঙ্কা কাটাতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ

প্রায় দুই বছর ধরে দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কমছে। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। এখন প্রণোদনা বাড়িয়ে প্রবাসী আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এই পদক্ষেপের কিছুটা ইতিবাচক ফল গত মাসে পাওয়া গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশিদের জন্য তৃতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক শ্রমবাজার থেকে এল নেতিবাচক খবর। বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা দেওয়া স্থগিত করেছে ওমান। ফলে দেশটিতে নতুন কর্মী পাঠানো বন্ধ হয়ে গেল। এতে প্রবাসী আয়ে আরও ধাক্কা আসতে পারে। এ বাজার দ্রুত চালু করতে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।




বিদেশে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজারের মূল ভরসার জায়গা মধ্যপ্রাচ্য। প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান এ অঞ্চলেই হয়। এর মধ্যে শীর্ষে আছে সৌদি আরব। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী গেছেন। গত বছর সৌদিতে গেছেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে গেছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ১৫০ জন।

মোট কর্মসংস্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত দ্বিতীয় হলেও কয়েক বছর ধরে কর্মী পাঠানোর দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান নিচে নেমে গেছে। মাঝে কয়েক বছর এই শ্রমবাজার বন্ধও ছিল। এখনো দেশটিতে কর্মী যাচ্ছেন আগের চেয়ে কম।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটির) তথ্য বলছে, মোট কর্মসংস্থানে তৃতীয় হলেও কয়েক বছর ধরে কর্মী পাঠানোর হিসাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার ওমান। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৮ লাখের বেশি কর্মী পাঠানো হয়েছে। গত বছর দেশটিতে গেছেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬১২ বাংলাদেশি।

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশটিতে কাজ করতে গেছেন ৭৬ হাজার ৬৭৯ জন। এই শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার অর্থ বিদেশে কর্মসংস্থান কমে যাওয়া। আর তার প্রভাব সরাসরি পড়বে প্রবাসী আয়ে।

রয়্যাল ওমান পুলিশের (আরওপি) বিবৃতির বরাত দিয়ে ওমানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ওমান ও মাসকাট ডেইলি নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য সব ধরনের ভিসা দেওয়া স্থগিত করার পদক্ষেপটি গতকাল মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে কার্যকর হয়েছে।

রয়্যাল ওমান পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পর্যটক ও ভ্রমণ ভিসায় যে বিদেশিরা ইতিমধ্যে ওমানে এসেছেন, তাঁদের জন্য ‘ভিসা পরিবর্তন’ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে পর্যটন ও ভ্রমণ ভিসায় ওমানে গিয়ে প্রবাসীরা কর্মী ভিসা নিতে পারতেন। এ সুবিধা স্থগিত হওয়ায় এ রকম যাঁরা এখন ওমানে অবস্থান করছেন, তাঁদের নিজ দেশে ফিরে কাজের ভিসা নিয়ে আবার ওমানে যেতে হবে। তবে এ সুযোগ বাংলাদেশিদের জন্য থাকছে না। কেননা, ওমানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা ইস্যু স্থগিত থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে।

ওমানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় দেশটি এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত কোনো একটি দেশের অতিরিক্ত জনবল ঢুকে গেলে ওমান এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

তবে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার থাকলে কোটার বেশি কর্মী পাঠানো অব্যাহত রাখা যেত বলে মনে করছেন বিদেশে কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার যুগ্ম মহাসচিব টিপু সুলতান।

টিপু সুলতান বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে কর্মী পাঠানোর শীর্ষে সৌদি আরব। তারা নিয়মিত কর্মী নিচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওমান হঠাৎ ভিসা বন্ধ করায় বাংলাদেশের বড় একটি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেল। এই বাজার দ্রুত চালু করতে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। তা না হলে প্রবাসী আয়ে এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে।

অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয় কমলেও দুই বছর ধরে বিদেশে কর্মসংস্থানের জোয়ার চলছিল। প্রতি মাসে গড়ে লাখের বেশি কর্মী যাচ্ছিলেন বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে ওমানের খবরটি একটি ধাক্কা হয়ে এসেছে। দেশটি নারীদের কর্মস্থানের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবে নারীরা গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে গেলেও ওমানের ক্ষেত্র ভিন্ন। সেখানকার তৈরি পোশাক কারখানায় ভালো বেতনে কাজের সুযোগ পান নারীরা। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে কাজ করতে হবে।

এদিকে প্রণোদনা বাড়ানোর পর প্রবাসী আয় কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন ১১৫ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে বড় পতন দেখা গেলেও অক্টোবরে তা কিছুটা গতি পায়। ব্যাংকিং চ্যানেল, অর্থাৎ বৈধ পথে অক্টোবরের প্রথম ২০ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১২৫ কোটি মার্কিন ডলার। ফলে অক্টোবরে প্রবাসী আয় সেপ্টেম্বরের ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ওমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেলে ধীরে ধীরে প্রবাসী আয়ে এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন কর্মী যেতে না পারলে পুরোনো যাঁরা আছেন, তাঁরাই প্রবাসী আয় পাঠাবেন। নতুন কর্মী গেলে বাড়তি প্রবাসী আয় পাঠানোর যে সম্ভাবনা তৈরি হয়, সেটি বন্ধ হয়ে যাবে।’

إرسال تعليق

Post a Comment (0)

أحدث أقدم